miscarriage গর্ভপাতনারীর যৌন রোগ 

গর্ভপাত কি, গর্ভপাতের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

গর্ভপাত কিঃ

গর্ভের অপূর্ণ অবস্থায় ভ্রুণ বের হলে তাকে গর্ভপাত বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎভ্রুণ পরিপূর্ণভাবে গঠিত না হয়ে তার আগেই যদি তা গর্ভ থেকে নির্গত হলে তাকে গর্ভপাত বলা হয় । একবার গর্ভস্রাব হলে পরবর্তী গর্ভেও গর্ভপাত হতে পারে। যে মাসে গর্ভস্রাব হয় সে সময় আসলে রোগীকে বিশেষ ভাবে সাবধানে থাকতে হয়। সাধারণত তৃতীয় মাসে, কখনো বা তার পূর্বে বা পরে গর্ভপাত হতে পারে। নারীর গর্ভ সঞ্চারের পর ভ্রুণটি জরায়ুতে ২৮০ দিন অর্থাৎ ৯ মাস ১০ দিন ধরে গঠিত হয়, তারপর শিশুর জন্ম হয়।  গর্ভকালীন প্রথম ২২ বা ২৪ সপ্তাহের মধ্যে যদি ৫০০ গ্রাম থেকে কম ওজনের একটি বাচ্চা প্রসব হয় সেই ক্ষেত্রে বাচ্চাটি আর স্বতন্ত্রভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।এই কম ওজনের বাচ্চা প্রসব কম ওজনের একটি বাচ্চা প্রসব করাকে আমরা গর্ভপাত বলি।

 

গর্ভপাতের কারনঃ

গর্ভপাতের কারণগুলো হলো

১। জেনেটিক কারণঃ

প্রায় ৫০% গর্ভপাত হয় জেনেটিক কারণে অথাৎ গর্ভস্থ ভ্রণটি অথবা ক্রোমজোমের সমস্যার কারণে বেঁচে থাকতে পারে না।

২। ইমিউনোরজিক্যাল কারণঃ

অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা যে সকল নারীর রক্তে বেশি থাকে তা তার নিজের কোষকেই আক্রমণ করে বসে। এই ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক প্ল্যাসেন্টাকে আক্রমণ করে কিংবা ভ্রুনের রক্তসঞ্চালন পথে বাঁধা সৃষ্টি করায় ভ্রূণটি বাঁচানো অসম্ভব হয় ।

৩। এনাটমিকেল কারণঃ

কিছু কিছু নারীর দেহের ইউটেরাসে সেপ্টাম অর্থাৎ একধরণের দেয়াল থাকে, ডাবল অথবা হাফ ইউটেরাইন ক্যাভিটি থাকে যার কারণেও অকাল গর্ভপাত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

৪। ধূমপান, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণঃ

গর্ভপাত হতে পারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের কারণেও । তাই নিজে ধূমপান তো করবেনই না ও অন্য কোন ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা থেকে বিরত থাকুন।

৫। অতিরিক্ত ওজোনের কারণে হতে পারে গর্ভপাতঃ

দেহের অতিরিক্ত ওজোন নানা ধরনের সমস্যার সাথে গর্ভপাতও ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত ওজোনের কারণে ডায়াবেটিস রোগ হয়, যা গর্ভপাতের একটি অন্যতম কারণ।

 

গর্ভপাতের লক্ষণঃ

মাসিক ঋতু শুরুর সময় শারীরিক অবস্থার যেরূপ হয় গর্ভস্রাবের সময়ও অনেকটা সেরূপ অবস্থা হয়ে থাকে।

১। গর্ভবতীর নড়াচড়া করতে বা কোন কাজকর্ম করতে চায় না।

২। গর্ভবতীর বিমর্ষ ভাব, সেই ধীরে ধীরে রক্তস্রাব বৃদ্ধি পায়।

৩। গর্ভবতীর কোমরে, তলপেটে বেদনার উদ্রেক হয়|

৪। গর্ভবতীর বেদনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়|

৫। গর্ভবতীর যখন অধিক বেদনা দেখা দেয় তখন জল ভাঙ্গে এবং ভ্রুণ নির্গত হয়।

৬। অনেক সময় গর্ভস্রাবে প্রসূতির জীবন বিপন্ন হয়ে উঠে।

 

গর্ভপাতের প্রতিকারঃ

বেশিরভাগ গর্ভপাত জেনেটিক সমস্যার কারণে হয়। দূর্ভাগ্যবশত এগুলো প্রতিরোধ এর উপায়  নেই। তবে যেসব অন্য কারণে হয়, সেগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যদি একবার হয়ে থাকে গর্ভপাত, তাহলে সম্ভব হলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করন, গর্ভপাতের কারণটা জানার চেষ্টা করুন। পরের বার গর্ভধারণের আগে ও সময় নিজের লাইফ স্ট্যাইলে কিছুটা পরিবর্তন আনুন এবং নিচের নিয়মগুলো দেয়া হলো, যেটা আপনাদের গর্ভপাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবেঃ

১। গর্ভধারণের আগের এক দুই মাস থেকে ফলিক এসিড ৪০০ মিঃগ্রা একটি করে খাবেন সম্ভব হলে।

২। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন।

৩। ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত।

৪। ধূমপান ত্যাগ করুন এবং আশেপাশের কেউ যাতে ধূমপান না করে, সেটাও খেয়াল রাখুন।

৫। এলকোহল বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন খাবেন না।

৬। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।

৭। এক্স রে, বা অন্য রেডিয়েশনে এক্সপোজ হওয়া যাবেনা।

৮। পেটে যাতে কোনও আঘাত না লাগে, এ ব্যাপারে সতর্ক হোন।

 

গর্ভপাতের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ

একোনাইট ন্যাপ (Aconite Nap.) – এই হোমিওপ্যাথি ঔষধ ভয় এবং উত্তেজনার কারণে সৃষ্ট গর্ভপাতের ঝুঁকিতে কার্যকরী।

এপিস মেল (Apis Mel.) – এই ঔষধ গর্ভাবস্থার ৩য় মাসে গর্ভপাতের ঝুঁকিতে কার্যকরী।

আর্ণিকা মন্টেনা (Arnica Montana )- এই ঔষধ দুর্ঘটনা জনিত কারণে গর্ভপাতের ঝুঁকিতে কার্যকরী।

এলেট্রিস্ ফ্যারিনোসা (Aletris Farinosa) – দুর্বলতা এবং রক্তশূন্যতারূ জন্য প্রদর।গর্ভস্রাব হইবার প্রবণতা।

ক্যামোমিলা (Chamomilla) – মানসিক উত্তেজনা ও জরায়ু হতে রক্তস্রাব তৎসহ প্রসব-বেদনার মত বেদনায় গর্ভপাতের ঝুঁকি।

ব্যাপ্টিসিয়া (Baptesia) – মানসিক অবসাদ,আঘাত  ঘুষঘুষে জ্বর হওয়ায় গর্ভপাতে আতঙ্ক।

স্যাবাইনা (Sabina) – উজ্জ্বল গাঢ় লাল রক্তক্ষরণ, প্রত্যেক দ্বিতীয় বা তৃতীয় মাসে অভ্যাসগত গর্ভপাত-এর  ক্ষেত্রে, জরায়ুর বেদনা উরুদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার ক্ষেত্রে চমৎকার হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

সিপিয়া (Sepia) – নারীর গর্ভাবস্থার পঞ্চম থেকে সপ্তম মাসের সময় গর্ভপাত হওয়া।

সিফিলিনাম (Syphilinum) – গর্ভধারীণীর সিফিলিসের কারণে গর্ভপাত হলে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

কলোফাইলাম (Caulophyllum) – জরায়ুর দুর্বলতার কারণে অভ্যাসগত গর্ভপাত হলে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

ক্রোটেলাস হরিডাস (Crotalus Horridus) – জমাটহীন কালো রক্তপাত, পচনশীল রোগ বা রক্তদূষণের কারণে গর্ভপাত।

থুজা অক্সিডেন্ট্যালিস (Thuja Occidentalis) – যেসকল নারীর গনোরিয়া রোগের ইতিহাস আছে তাদের গর্ভপাত প্রবণতায় এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

থাইরয়েডিনাম (Thyroidinum) – মূল যান্ত্রিক কারণ না থাকলে অকাল গর্ভপাত প্রবণতা। নারী থাইরয়েড কর্মহীনতার কারণে গর্ভপাত প্রবণতা থাকলে তা প্রতিরোধ করে, এটা জরায়ু থেকে ধীর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

ট্রিলিয়াম পেন্ডুলাম (Trillium Pendulum) – গর্ভপাতে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

টিউবারকিউলিনাম (Tuberculinum)- যক্ষারোগের কারণে গর্ভপাত হলে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ ।

পালসেটিলা (Pulsatilla) – শীতকাতর, পিপাসাহীন নারী, ভীরু, উত্তেজনাপূর্ণ গর্ভপাতের ক্ষেত্রে এটি একটি চমৎকার হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

জেলসেমিয়াম (Gelsemium) – মানসিক উত্তেজনায় গর্ভপাত, ব্যথা পেট থেকে উর্ধ্বগামী হয় এবং সবশেষে পিছনে স্থির হয়।

থ্যালষ্পি বার্সা (Thlaspi Bursa) – অধিক পরিমানে রক্তস্রাব,তৎসহ জরায়ুর প্রচন্ড শূলবেদনা জনিত কারণে গর্ভপাত-এ খুব উপকারী হোমিওপ্যাথি ওষুধ ।

ইপিকাক (Ipecacuanha) – গর্ভাবস্থায় বমন, নাভী হতে জরায়ু পর্যন্ত ব্যথা এবং বমি বমি ভাবসহ বরাবর উজ্জ্বল লাল রক্ত ​প্রবাহ থাকলে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ খুবই কার্যকরী।

ফেরাম মেটালিকাম (Ferrum metallicum) – পাণ্ডু নারীদের গর্ভপাত হওয়া, সাথে মাসিক বন্ধ এবং সাদা স্রাব হওয়া ।

ক্যাল্কেরিয়া কার্বোনিকা-অষ্ট্রিয়েরাম (Calcaria Carbonica -Ostrearum )- রক্তাধিক্য সংক্রান্ত নারীর সাদা স্রাব হওয়া সেই সাথে সময়ের আগেই মাসিক হয়ে যাওয়া।

সিমিসিফিউগা রেসিমোসা (Cimicifuga Racemosa) – গর্ভাবস্থার শেষের দিকের স্বভাবগত গর্ভপাত। এটি গর্ভপাত প্রতিরোধে একটি চমৎকার হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

Related posts

Leave a Comment