নারীদের অতিরজ-এপিমেনোরিয়ার (Epimenorrhea) কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
অতিরজ এপিমেনোরিয়া (Epimenorrhea) কিঃ
যদি কোন নারীর একটি মাসিক ঋতু আরম্ভ হবার পর অনেক দিন সময় ধরে রক্তস্রাব চলতে থাকে তাকেই অতিরজ এপিমেনোরিয়া বলে। কোন কোন সময় চিকিৎসগণও মেনোরেজিয়ার সঙ্গে একে ভুল করে বসেন। কেননা মেনোরেজিয়ার ক্ষেত্রে রক্তস্রাব বেশি হয় কিন্তু এপিমেনোরিয়ার ক্ষেত্রে রক্তস্রাব বেশি না হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। যদিও বাংলায় আমরা উভয়টাকেই অতিরজ বলে অভিহিত করে থাকি। তবে মূল পার্থক্যটুকু মনে রেখে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের চিকিৎসা দেয়া উচিত। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে রক্তস্রাব দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং এই সকল ক্ষেত্রে প্রপার হোমিও চিকিৎসা এর প্রয়োজন তা না হলে রোগীর জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে।
এপিমেনোরিয়ার কারণঃ
যে সকল কারণে এপিমেনোরিয়া (অতিরজ) হতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলোঃ
- ডিম্বশয় হতে নিঃসৃত হরমোন দুটি চক্রবৎভাবে সময়মত কাজ না করলে । যদি নিঃসরণ কম হয় বা কম সময় ধরে চলে তবে কাজ খুব ধীরে ধীরে হয় । এই জন্য তখন Destructive Phase এর সময় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ৮/১০/১২ দিন পর্যন্ত ধাতুস্রাব চলতে পারে। অতি ধীরে ধীরে ফোঁটা ফোঁটা করে ঋতুস্রাব হয় আবার ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।
- কখনও কখনও জরায়ুর Destructive Phase ৫/৬ দিন দীর্ঘ হয়ে থাকে বলে ঐ সময় রক্তপাত হয়। কিন্তু হরমোনের অনিয়মিত ক্রিয়ায় ঐ সময় বৃদ্ধি লাভ করে ৮/১০/১২ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। এমন কি তার অধিক সময় ধরেও চলতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে ধরা পড়ে যে, জরায়ুর অত্যধিক দুর্বলতার জন্য জরায়ুর নির্দিষ্ট কার্যক্রম যথাযথ ভাবে সম্পন্ন না হয়ে এই রোগ দেখা দিয়েছে।
- ডিম্বাশয়ে Hypertroply এর কারণে এই রোগ হতে পারে।
- কখনও কখনও মেনোরেজিয়ার মত এতেও রক্ত চাপ বৃদ্ধি হতে দেখা যায়। এর ফলে ধীরে ধীরে জরায়ুর চাপ তথা রক্তচাপ কমে এবং ঋতু দীঘ চলতে থাকে।
- কোন কোন সময় জরায়ুতে ক্ষত হলে বা কোন প্রকার Infection হলে দীঘ ঋতুস্রাব হতে থাকে। প্রথমে অবশ্য ধীরে ধীরে শুরু হয় কিন্তু পরে বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। এই সকল ক্ষেত্রে সিফিলিস বা গনোরিয়ার Infection থাকার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে নারীদের ক্ষেত্রে এই কারনটাই বেশি দেখা যায়। তাই এই সকল সমস্যাগুলি সমূলে নির্মূল করেতে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া অতি জরুরি।
অতিরজ এপিমেনোরিয়া র লক্ষণঃ
নারীর এপিমেনোরিয়ার সমস্যার উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো –
- ঋতুস্রাব ঠিকসময় শুরু হয় তবে তা ফোঁটা ফোঁটা করে দীঘ দিন পর্যন্ত (১০/১২ দিন) চলে। দীঘ সময় ধরে ঋতু চলার জন্য রোগীর ঋতু বন্ধ খুব স্বল্প সময় মাত্র থাকে ।
- অনেক সময় ধরে রক্তস্রাব হওয়ার ফলে অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়। যার ফলে রোগীর রক্তহীনতা ও দুর্বলতা লক্ষণ প্রকাশ পায়। চেহারার বণ ফেকাশে হয়ে যায়, হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়। নাড়ীর গতি অস্বাভাবিক থাকে, শ্বাস প্রোশ্বাসে অনিয়ম লক্ষণ দেখা যায়। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কোন পরিশ্রমের কাজ করতে পারে না।
- রোগী অত্যন্ত খিট খিটে মেজাজের, অসহনশীল, কাজে অনিহা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
- কোন কোন সময় শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ আসে। কখনও কখনও হজম শক্তির গোলমাল দেখা দেয়, বদহজম থেকে অম্ল হয়।
- হজম শক্তি কমে যাওয়ায় প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্য, উদরাময়, অম্ল ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। যার দরুন এই সকল রোগী দুর্বল থাকে, মাথায় যন্ত্রণা হয়, মাথা ঘোরায়, হাটাচলা করার শক্তি পায় না, মনমরা থাকে।
এপিমেনোরিয়ার প্রতিকারঃ
নারীদের এপিমেনোরিয়া লক্ষণের ক্ষেত্রে কোন কোন সময় বেশ কয়েকটি অথবা অনেক গুলি লক্ষণ একবারেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে রোগ যে পর্যায়েই থাকুক না কেন কোন প্রকার সংকোচ না করে যথা সময়ে প্রপার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিলে খুব দ্রুতই যাবতীয় জটিল উপসর্গগুলি নির্মূল হয়ে রোগী সুস্থ হয়ে উঠে।
অতিরজ এপিমেনোরিয়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
কার্বোভেজিটেবিলিস (Carbo Vegetabilis): নিয়মিত সময়ের আগে ঋতু শুরু হয় এবং পরিমানে প্রচুর, ঋতুস্রাব কালে হস্ত এবং পদতল জ্বলনে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধ খুবই কার্যকরী।
লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium): ঋতু অতি বিলম্বে আরম্ভ হয় যা পরিমানে প্রচুর এবং দীর্ঘস্খায়ী।
ক্যাল্কেরিয়া কার্বোনিকা-অষ্ট্রিয়েরাম (Calcaria Carbonica -Ostrearum): ঋতুকালের পূর্বে মাথা ব্যথা, শূল বেদনা, শীতবোধ এবং ঋতুকালে জরায়ুর মধ্যে করতনবৎ যন্ত্রণা। ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র সংঘটন, প্রচুর ও দীর্ঘস্খায়ী্।
ক্রিয়োজোটাম (Kreosotum): ঋতুকালে শ্রবণ কষ্টসাধ্য, কানের মধ্যে ঝাঁই ঝাঁই শব্দ ও গজন। যন্ত্রণা।ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র সংঘটন ও দীর্ঘস্খায়ী্।
ইস্কিওলাস হিপ (Aesculus Hip): অবিরত বেদনা ও বস্তিপ্রদেশ বেদনা।হাঁটাচলা করলে বা পিঠ নুয়ালে বেদনা অতিশয় বৃদ্ধি। জরায়ুর স্থানচ্যুতি, প্রদাহ, প্রদর স্রাব।