কাসি (Cough) কারণ, লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

কাশি (Cough) প্রকৃত পক্ষে স্বয়ং সত্ত্বত রোগ নয়, ইহা অন্যান্য রোগের লক্ষণমাত্র। Cough is the Commomust symptom of nearly all respiratory diseases and indicates an effort expel a foreign substance causing irritation an any place in the cough reflex path.

 

কাশি (Cough) ‘র কারণ (Causes of  Cough):

(i) শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের যে কোন প্রকার রোগ হলে কাশির সৃষ্টি হতে পারে। (ii) সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগা। (iii) গলদেশের রোগ, শ্বাসনালীর প্রদাহ, ফুসফুস প্রদাহ, ফুসফুস আবরণের প্রদাহ, স্বরভংগ, যক্ষ্যা প্রভৃতি রোগ হলে। (iv) হৃদযন্ত্রের অক্ষমতাজনিত ফুসফুসে অধিক বক্ত সঞ্চয় কারণেও কাশি হতে পারে।

 

কাশি (Cough) এর প্রকার ভেদ (Classification of  Cough):

সাধারণত দু প্রকার (1) তরল (ii) শুদ্ধ। তরল কাশিতে তরল পদার্থের শ্লেষ্মা উঠে কিন্তু শুদ্ধ কাশিতে তেমন শ্লেষ্মা উঠে না। কাশির সময় কিছু বের হতে চায় না। এবং শ্বাসযন্ত্রের ভিতরে কোন তরল পদার্থ নেই এমন অনুভব। এছাড়া আরো অনেক জটিল প্রকৃতির কাশি আছে যেমন- হুপিং কাশি; ঘুংড়ি কাশি ইত্যাদি। এই জাতীয় কাশি খুবই বেদনাদায়ক।

 

কাশি (Cough) ‘র লক্ষণ (Clinical signs and symptoms):

বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসাবে কাশি দেখা যায় এবং উহার লক্ষণও বিভিন্ন। অনেক সময় কাশির লক্ষণ দেখে মূল রোগটি ধরা যায়। সর্দি জ্বরে সামান্য কাশি হতে পারে। শিশুদের হুপিং কাশি হলো আপনা থেকেই দীর্ঘদিন ধরে কাশি হয় এবং পরে Chronic রূপে দেখা দেয়। ম্যারিনজাইটিস রোগে মাঝে মাঝে খুক খুক করে কাশি হয় এবং এই কাশিতে ঘড় ঘড় করে শব্দ হয়। ব্রংকাইটিস হলে জ্বর ও কাশি এক সংগে থাকতে পারে এবং নিঃশ্বাসে সাঁই সাঁই করে শব্দ হয়। অনেক সময় ইহা Chronic আকার ধারণ করে। যক্ষ্মারোগে জ্বর সর্দির পরে বেদনা ও কাশি হয়। কাশির সংগে বেশী রক্ত পড়ে। অনেক সময় লাল উজ্জ্বল বর্ণের রক্ত পড়ে। রক্ত পড়া কমে এলে কাশি হয় এবং তার সংগে শ্লেষ্মা বের হয় না। হাঁপানিতে যে কাশি হয় তা রাত্রে বৃদ্ধি পায় তৎসহ শ্বাসকষ্ট থাকে। নিউমোনিয়াতে যে কাশি হয় তার গয়ার ইটের গুড়ার মত এবং পরিমানে কম। ঘুংড়ি কাশিতে ঘঙ ঘঙ শব্দ বিশিষ্ট কাশি হয়। হাম জ্বরের সংগে এক প্রকার শুষ্ক খুশ খুশে কাশি দেখা যায়। স্বরযন্ত্রের প্রদাহের জন্য যে কাশি হয় তাতে গয়ার থাকে। কাশির রোগী নানা রূপ যন্ত্রনা ভোগ করে। দিনে রাতে কখনো সুস্থমত ঘুমাতে পারে না। হাই পাই করে: শ্বাস প্রশ্বাসে খুব কষ্ট পায়, দম বন্ধ হবার উপক্রম। গ্লাটসের ছিদ্র পায় এবং সংকুচিত হওয়ায় রীতিমত বাতাস যাতায়াত করতে পারে না। এই জন্য রোগীর শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। গলায় বেদনা বোধ করে। নাড়ী ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে যায়। নিঃশ্বাস নেবার সময় নাকের ছিদ্র ফুলে উঠে। অনেক সময় কাশতে কাশতে ঝিল্লী বা পর্দা ছিড়ে যায় বা খণ্ড খণ্ড হয়ে উঠে। কাশতে কাশতে রোগী ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে।

 

রোগ নিরুপনের পদ্ধতি (Method of Diagnosis):

লক্ষণ ধরার জন্য চিকিৎসক নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে-

(i) Age of patient, (ii) Duration of Coma (iii) What Part of the day or right it is worst. (iv) Voice (v) Paroxysmal (vi) Posture (viii) vomiting.

 

কাশি (Cough) এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (Homeopathic Treatment for Cough)

একোনাইট ন্যাপ  : শুষ্ক ও কঠিন তরুন কাশি তৎসহ অস্থিরতার ভাব। মাথা ধরা, মুখমণ্ডল রক্তিম, পিপাসা, গলা শুদ্ধ। স্বল্প প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, গলায় জ্বালাবোধ। চিৎ হয়ে শুলে কাশির উপশম, কাৎ হলে কাশির বৃদ্ধি। এক মাত্রা করে দিনে ৫/৬ বার।

ইপিকাক : অনবরত হাঁচি, বুকে প্রচুর সর্দি কিন্তু কাশলে উঠে না। আক্ষেপিক শ্বাসরুদ্ধ কর কাশি, শ্বাসনালীতে সুড় সুড়। সাই সাই শব্দ, প্রবল কাশি, বুকে ঘড় ঘড় শব্দ। কাশির সময় তলপেটে বেদনা বমি ও বমি ভাব। প্রয়োগবিধি (Application)- এক মাত্রা করে দিনে ৫/৬ বার।

ব্রায়োনিয়া  : শুষ্ক কাশি, দিনের বেলায় কাশির বৃদ্ধি। সরল কাশি; পুরাতন সর্দিসহ সাদা গায়ের নিঃসরন। বমন ও বমনভাব। কাশির সময় মস্তকে বুকে বেদনা। প্রয়োগবিধি (Application)- এক মাত্রা করে দিনে ৪/৫ বার সেবা।

এন্টিম টার্ট 3x বিচূর্ণ : শ্লেষ্মার অত্যধিক ঘড় ঘড় শব্দ কিন্তু কাশলে উঠে না। বুকের মধো জ্বালা বোধ। ঐ জ্বালা গলা পর্যন্ত। কষ্টকর শ্বাস, দমবন্ধ। ডান পাশে গুলে কাশির উদ্রেক। প্রয়োগবিধি (Application)- এক মাত্রা করে Distilled water এ দিনে ৮/১০ বার সেব্য।

হিপার সালফ : শুদ্ধ শীতল বাতাসে স্বরভংগ ও কাশি। স্বর লোপ। চলার সময় বিরত্তকর কাশি। ঠাণ্ডা কিছু খেলে কাশি আরস্ত। শ্বাসরোধকর কাশি। শুদ্ধ ঠাণ্ডা বাতাসে বৃদ্ধি কিন্তু ভিজা জলবায়ুতে উপশম। প্রয়োগবিধি (Application)- এক মারা করে দিনে ৪/৫ বার দেয়।

 

অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ (Other important remedies):

তরুন কাশির জন্যঃ সিনা 6, বেলেডোনা 6. ড্রসেরা 6. স্যাংগুনেরিয়া নাই 30, সিপিয়া 30, ক্যালকেরিয়া কার্ব 3x. ক্যামোনিলা 6. কুপ্রাম সেট 6. হায়োসিয়াস 6. ফসফরাস 30, রিউমেক্স 6. স্পাজিওয়া টোটা Q. ডালকামারা 6. বাসটক্স 30

পুরাতন কাশির জন্য: সালফার 200 একালাইফা ইণ্ডিকা Q. এলিয়াম স্যাটাইভা 6. জাস্টিসিয়া অটো Q. ক্যালিবাইক্রেম 3x বিচূর্ণ, ম্যাংগেনাম এসো 6. মেফাইটিস 1x. ষ্টিকটা Q. মার্কুরিয়াস-6.

 

বায়োকেমিক ঔষধ (Bio Chemic medicines):

ম্যাগনেসিয়া ফস 6x, নেট্রাম মিউর 6x, ২/৩ নেট্রাম সালফ 12x, ক্যালিসালফ 6x, উপকারী। ২/৩ গ্রেন মাত্রায় সামান্য গরম জলে দিনে ৪/৫ বার।

 

কাশি (Cough) ‘র পথ্য ও আনুষংগিক ব্যবস্থা (Diet and management):

হোমিওপ্যাথিতে কাশির আরোগ্য করার চিকিৎসা অতি জটিল বলে আমি মনে করি। এছাড়া এটা বেশ সময় সাপেক্ষ। মূল রোগটি নির্নয় করে এবং লক্ষণ বিচার করে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়। অতএব খুব সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসার প্রয়োজন। পথা ও আনুষংগিক ব্যবস্থার প্রতি লক্ষা রাখতে হবে। বুকে সর্দি বসে গেলে সরষের তেল বা পুরাতন ঘি মালিশ গরম করে মালিশ করতে হবে। জ্বরে এবং বুকে বেদনা থাকলে ঈষৎ উষ্ণ জলে স্নান। সামান্য কাশিতে মিছরী মুখে রাখলে উপকার। অবরুদ্ধ আর্দ্রবায়ু অথবা জনাকীর্ণ স্থানের বায়ু সেবন করা উচিত নয়। তুলসীপাতার রস, ছোট এলাচ, হরিতকী; ঘি, মধু, বাসকপাতার রস উপকারী। লঘু পুষ্টিকর খাদ্য। টক, বাসি, পচা, উগ্র মশলাযুক্ত খাদ্য বর্জন। ভাত, রুটি; তরীতরকারী, হালকা মাংসের ঝোল, বেতের শাক, কচিমূলো উপকার। যা কিছু পথ্য দিবে তা যেন ওতে হয়। ঠাণ্ডা কোন কিছু খাওয়া বারন। রোগীর পেটে যদি কোন গোলযোগ দেখা না দেয় সেই ভাবে পথ্যের ব্যবস্থা। কোষ্টকাঠিন্য বা উদরাময় হলে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। চিকিৎসকগণ সাধারণতঃ মূল রোগটিকে উপেক্ষা করে শুধু উপসর্গ হিসাবে কাশির ঔষধ ব্যবস্থা করেন বলে কাশি সারতে দেরী হয়। এই দিকেও নজর রাখতে হবে।

Related posts

Leave a Comment