স্তন ক্যানসার, স্তন ক্যানসারের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার, ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
স্তন ক্যানসার কিঃ
কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটলে ক্যানসার হয়। তাই যখন স্তনের কোন কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে স্তন ক্যানসার বলে। মহিলাদের মধ্যে ক্রমশই বাড়ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। বিশেষ করে তিরিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যেই এই রোগ ছড়াচ্ছে বেশি। প্রথমদিকে ধরা পড়লে সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি।
স্তন ক্যানসারের কারনঃ
স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী এই অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। তারপরও যে সকল সহায়ক কারণে স্তন ক্যানসার হয় বলে মনে করা হয় সেসকল কারণ নিম্নোরূপ:
- নিকটাত্মীয়ের যেমন-মা খালার পুর্বে স্তনের ক্যানসার হয়ে থাকলে।
- পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে অন্য কোন ক্যানসার (বিশেষ করে মলাশয়, ভ্রূণকোষের ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার) হয়ে থাকলে।
- যাদের কখনও সন্তান হয়নি তাদের স্তনের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অনুরুপভাবে যারা সন্তানকে কখনও স্তন্য দান করেননি তাদের স্তনের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- দীর্ঘদিন গর্ভনিরোধক পিল গ্রহণ করলে।
- কখনও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) গ্রহণ করলে।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণঃ
- স্তনে কখনও গুটিকা দেখা দিলে বা স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া।
- স্তনের স্বাভাবিক আকার বা আকৃতির পরিবর্তন ঘটলে।
- স্তনের স্বাভাবিক ত্বক কুঁচকে গেলে।
- স্তনের বোঁটা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ভেতর দিকে ঢুকে গেলে।
- রক্তসহ তরল পদার্থ স্তনের বোঁটা থেকে নির্গত হলে।
- স্তনের নিপিলে বা তার চারপাশে রাশ বা চুলকানির মতো হলে।
- বগলের লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
স্তন ক্যানসারের প্রতিকারঃ
- নিজে নিজে ৩০ বৎসর বয়স থেকে নিজের স্তন পরক্ষিা করুন ।
- টাটকা শাক-সবজি ও ফলমূল খাবেন।
- সন্দেহ হলে ক্যানসার সার্জনের শরনাপন্ন হবেন।
- ধূমপান ও এলকোহল পরিহার করুন।
- সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান।
- ৩০ বৎসর বয়সের মধ্যে সন্তান গ্রহণ করুন।
- রিক্স ফেক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মোমোগ্রাফি করান। যেমন ফ্যামিলিতে কারো স্তনের ক্যানসার থাকলে।
ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাফি
৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিনবছর পর পর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ম্যামোগ্রাম হচ্ছে এক্স-রে’র মাধ্যমে নারীদের স্তনের অবস্থা পরীক্ষা করা। সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার এতো ছোট থাকে যে বাইরে থেকে সেটা বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে খুব ছোট থাকা অবস্থাতেই বা প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে ক্যান্সার থেকে সুস্থ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রচুর থাকে। আর এই পরীক্ষার জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে।
স্তন ক্যানসারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
কন্ডুরাঙ্গ (Condurango): ক্যানসারের টিস্যুর ফাটাফাটা, রোগী কৃশ ও র্শীণ, খোলা টিউমার, ত্বক কুঞ্চিত ও পাপল বর্ণের স্পটযুক্ত, ডান স্তনের স্কিরাস ক্যানসার, স্কিরাস ক্যানসারের সাথে ত্বক বগলের লিম্ফ নোড সম্পৃক্ত।
কোনিয়াম (Conium): বাম স্তনের ক্যানসার, বাম স্তনের স্কিরাস ক্যানসার, স্কিরাস ক্যানসারে তীক্ষ্ণ তীর ছোটার ন্যায় ব্যথা, আঘাত প্রাপ্তির পর ক্যানসার, ক্যানসারের সাথে স্তনে ভারবোধ, ক্যানসারের মাংসপিন্ড কোন দিকে সরে না, অত্যন্ত শক্ত পাথরের মতো শক্ত স্তন।
হিপার সালফ (Hepar sulph): হুল ফোটার ন্যায় ব্যথা ও পুরাতন পনিরের ন্যায় গন্ধযুক্ত।
সাইলিশিয়া (Silicea): পুরাতন ক্ষতচিহ্নে ক্যানসার সৃষ্টি, ক্যানসারে ঘা, স্তন কেটে বাদ দেবার পর, ক্যানসারে খোলা টিউমার, ডান স্তনের স্কিরাস ক্যানসারের সাথে চুলকানি থাকলে।
এস্টারিয়াস রুবেন্স (Asterias Rubens): ক্যানসারাস টিউমারের লাল স্পট থেকে রক্তযুক্ত স্রাব হয় এবং ধীরে ধীরে সমস্ত স্তনে আক্রান্ত হয়, ছুরিকাবিদ্ধবৎ ব্যথা, ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারে না, ত্বক কুঞ্চিত ও টিউমার উপর লাল বর্ণের স্পটযুক্ত, ডান স্তনের স্কিরাস ক্যানসারের ভিত্তি (base) সম্পূর্ণভাবে বুকের গায়ে শক্তভাবে আটকে রয়েছে।
ফসফরাস (Phosphorus): প্রদাহিত ক্যানসার, শক্ত, অত্যান্ত ব্যথাযুক্ত, বাতাসের সংস্পর্শে বৃদ্ধি পায়, ছুরিকাবিদ্ধবৎ ব্যথার সাথে সহজে রক্তপাত, স্তনের বোঁটায় ক্ষতবৎ ব্যথা।