Hypertrophy of Heart হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধিহার্টের রোগ 

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধি : কারণ, লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

হৃদপিন্ডের পেশীগুলোর অনিয়মিত বিবৃদ্ধি হলে তাকে হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধি (Hypertrophy of Heart) বলে। হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক আকার আতা ফলের মত কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হলে হৃদপিন্ড খুব বড় হয়, সুগোল এবং ভারী হয় তৎসহ পেশীগুলো পুরু হয়ে ওঠে।

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধির কারণ (Eetiology):

১. হৃদপিন্ডের বিভিন্ন গহ্ববরস্থ কপাটিকার দূর্বলতা।

২. ধমনীগুলোর রক্ত প্রবাহে কোনও বাধা সৃষ্টি হলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং এই সকল বাধা অতিক্রম করে রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত রাখার জন্য হৃদপিন্ডের পেশীর বিবৃদ্ধি ঘটে।

৩. অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য হৃদপিন্ডের রক্ত প্রবাহের অবরোধ।

৪. অতিরিক্ত চা, তামাক, কফি সেবন।

৫. সাধারণত: স্ত্রী লোক এর চেয়ে পুরুষের এই রোগ বেশী হয়।

৬. সাধারণত অন্য কিছু অসুখের কারণে, যেমন উচ্চ রক্তচাপে, হার্ট ভাল্বের অসুখ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, পালমোনারি হাইপারটেনশন, পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন, অ্যানিমিয়া, থাইরয়েড অসুখ, থাইরয়েড অসুখ, অ্যামাইলয়ডোসিস ইত্যাদির কারণে হৃদপিন্ডের আকার বড় হয়ে যায়।

 

শ্রেণীবিভাগ (Classification):

১. Public : হৃদপিন্ডের প্রাচীর গাত্রের স্থুলতা, ক্যাভিটির কিছু হয় না।

২. Economic : প্রাচীর গাত্রের স্থুলতা সহ ক্যাভিটির বিবৃদ্ধি।

৩. Coucentric : প্রাচীর গাত্রের স্থুলতা সহ ক্যাভিটি ছোট হয়ে যাওয়া।

 

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধির লক্ষণ (Signs and symptoms):

১. হৃদস্পন্দন সজোরে হয়ে থাকে।

২. হৃদপিন্ড স্থানের পূর্ণগর্ভ শব্দ বৃদ্ধি ও বামদিকে স্ফীতভাব।

৩. হৃদপিন্ডর অবস্থানে যন্ত্রণা। হৃদ স্পন্দন অনিয়মিত, সামান্য পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হয়।

৪. রক্তাধিক্যের কারণে শিরায় ব্যাথা, মাথা ঘোরে, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হয়, দৃষ্টি শক্তির হ্রাসপ্রাপ্তি।

৫. খুস খুস করে কাশি, কখনও বুকের এক পাশ ফুলে উঠে, সাধারণত বাম পাশেই রোগ লক্ষণ বেশী।

 

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধিতে জটিলতা

হৃদপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া প্রবাদে যত ভালোই শোনাক, বাস্তবে বিপদের কারণই বেশি। কার্ডিওমেগালি হলে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে আছে—

হার্ট ফেইলিওর: হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধির (কার্ডিওমেগালি) অন্যতম জটিলতা এটি। সাধারণত হার্টের বাম অলিন্দ বড় হয়ে এটা হতে পারে। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করলে আরো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রক্ত জমাট বাঁধা: হৃদপিন্ডের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালি ব্লক করে দিতে পারে। এই জমাট রক্ত যখন রক্তনালি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে যায় তখন সেখানে ব্লক হতে পারে। এ জমাট রক্তের কারণে স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকও হতে পারে। কখনো কখনো জমাট রক্ত ফুসফুসে প্রবেশ করে পালমোনারি অ্যামবোলিজমের মতো বিপজ্জনক অসুখের কারণও ঘটাতে পারে।

হার্ট মারমার: হৃদপিন্ডের অভ্যন্তরে ভাল্ব বা কপাটিকা যথাযথভাবে বন্ধ হতে না পারলে এক ধরনের শব্দ হয়, যা হার্ট মারমার নামে পরিচিত।

হঠাৎ মৃত্যু কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধির কারণে কখনো কখনো হঠাৎ করেই হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ মৃত্যুর কারণ ঘটে। এ পরিস্থিতিতে রোগী সাধারণত অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

 

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধির আধুনিক পরীক্ষা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে। এ ধরনের পরীক্ষার মধ্যে আছে—

বুকের এক্সরে : সাধারণত বুকের একটি এক্স-রে দেখেই প্রাথমিকভাবে রোগটি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। কারণ এক্স-রেতে হার্টের একটি আকৃতি পাওয়া যায়।

এছাড়াও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটির কারণ বের করা হয়।

ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম : হৃদপিন্ডের ইলেকট্রিক্যাল কার্যাবলি পরীক্ষার জন্য ব্যবহূত হয়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও হার্টঅ্যাটাকের ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ইকোকার্ডিওগ্রাম: হৃদপিন্ডের একটি ভিডিও ইমেজ তৈরি করা হয় এবং এর চারটি প্রকোষ্ঠের অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা হয় হৃদপিন্ড ঠিকমতো পাম্প করতে পারছে কি না।

স্ট্রেস টেস্ট: এই টেস্ট করার জন্য কিছু সময় ব্যায়াম করতে হয়। ব্যায়ামের পর দেখা হয় শারীরিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় হৃদপিন্ড কতখানি কর্মক্ষম আছে।

এমআরআই ও সিটি স্ক্যান: কার্ডিয়াক এমআরআই ও কার্ডিয়াক সিটি স্ক্যান এর মাধ্যমে হৃদপিন্ডের সার্বিক কার্যক্রম দেখা যায়।

রক্তের পরীক্ষা: এগুলো মূলত হৃদপিন্ডের অবস্থা দেখতে নয়, রক্ত পরীক্ষা করতে হয় শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যাবলি সম্পর্কে সাম্যক ধারণা পেতে।

কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন বায়োপসি: বিশেষ ধরনের ক্যাথেটারের মাধ্যমে হৃদপিন্ড থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয় এবং হৃদপিন্ড কতখানি পাম্প করতে পারছে তা দেখা যায়।

 

 

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (Homeopathic Treatment for Hypertrophy of Heart)

আর্নিকা মন্ট (Arnica Mont) : হৃদ বেদনা, বাম কুনইয়ের উপর অধিক বেদনা। হৃদ প্রদেশে খোঁচামারা বেদনা, নাড়ী দূর্বল, সবিরাম। শ্বাসকষ্টের সাথে হৃদপিন্ডের শোথ। হাত পা ছড়িয়ে রাখে। আঘাত, পতন, প্রহার, নিষ্পেশণ। হৃদপিন্ডের মেদ সঞ্চয় এবং বিবৃদ্ধি।

স্পাইজেলিয়া (Spigelia): হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধি বিশেষ করে ডান দিকে। প্রবল হৃদস্পন্দন, বেদনা, বুক ধরফরানি। মুখে বিশ্রী গন্ধ, নারী দূর্বল, অনিয়মিত। খোঁচামারা বেদনা, শ্বাসকষ্ট, বাত জাতীয় প্রদাহ।

আর্সেনিক এল্বাম (Arsenic Album): হৃদস্পন্দন, বেদনা, শ্বাসকষ্ট, দূর্বলতা। প্রাতকালে নাড়ী অপেক্ষাকৃত দ্রুত। হৃদপিন্ডের প্রসারণ, নীল পান্ডু রোগ, মেদাপকর্ষ। হৃদশূল তৎসহ ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে বেদনা। পিঠের নিম্নাংশে বেদনা, স্কন্ধদুটিতে টান পড়ে।

ডিজিটালিস (Digitalis P.): সজোরে হৃদস্পন্দন সহ বক্ষাস্থির নীচে বেদনা। সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট; মূর্চ্ছাভাব, মাথা ঘোরে। সামান্য নড়াচড়ায় প্রবল হৃদকম্পন। হৃদপিন্ড বরাবর সূচীভেদ্য বেদনা। হৃদপিন্ডের মাইট্রাল ভালবের পীড়া হেতু হৃদক্রিয়া অনিয়মিত। হৃদপিন্ডের শোথ।

একোনাইট (Aconite) : হৃদপিন্ডের ক্রিয়া দ্রুত স্পন্দন, ফুসফুসে রক্ত সঞ্চয়, শ্বাসকষ্ট, নাড়ী দ্রুত। বাম পার্শ্বে বেদন। উৎকন্ঠা, বৃক ধরফর করে। হাতের আঙুলে ঝিঁ ঝিঁ ধরে। নাড়ীপূর্ণ, কঠিন শক্ত এবং উলম্ফশীল। ঘুমের সময় বোবায় ধরে।

 

হৃদপিন্ডের বিবৃদ্ধিতে বায়োকেমিক ঔষধ:

ক্যালকেরিয়া ফ্লোর (Calceria Flour), কেলি মিউর (Kali Mur)।

Related posts

Leave a Comment