অতিরজ বা মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia)নারীর যৌন রোগ 

নারীদের অতিরজ বা মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia) – কারণ, লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

অতিরজ বা মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia) কিঃ

মেনোরেজিয়ার এবং মেট্রোরেজিয়াদ্বয়ের মধ্যে লক্ষণের পার্থক্য থাকলেও বাংলায় ইহাদের অর্থ হলো অতিরজ বা অকালরজঃ। নারীদের যখন অধিক পরিমানে এবং ঠিক নিয়মিত সময়ে মাসিক ঋতুস্রাব হয় তখন তাকে মেনোরেজিয়া বলে। আবার যখন নিয়মিত সময় পর অর্থাৎ ২৮ দিন পর ঋতু স্রাব না হয়ে অন্য সময়ে অধিক পরিমানে বা অন্য কোন কারণে অধিক পরিমানে জরায়ু থেকে রক্ত স্রাব হয় তখন তাকে মেট্রোরেজিয়া বলে।

অতিরজ বা মেট্রোরেজিয়ার কারণঃ

মেট্রোরেজিয়া স্ত্রী যৌনাঙ্গের একটি প্রধান রোগ যা নানা প্রকার কারণে হতে পারে।
১. জরায়ু এবং যোনি গাত্রে টিউমার হলে, জরায়ু গ্রীবার ক্যান্সার বা ঐ জাতীয় রোগ হলে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
২. ডিম্বকোষ বা ডিম্বনালীর পীড়া বা প্রদাহ হলে।
৩. জরায়ুর স্থানচ্যুতি হলে, প্রথম রজস্রাব বিলম্ব হলে,
৪. দেহের হরমোন ক্রিয়ার গোলযোগ হলে বা হরমোন যথাযথভাবে হরমোন নিঃসরণ না হলে ইহা দেখা দিতে পারে।
৫. এছাড়া টাইফয়েড, বসন্ত, কলেরা, ইত্যাদি রোগে ভোগকালে কখনো কখনো জননেদ্রিয় হতে অতিরিক্ত রজস্রাব হয়।

 

অতিরজ বা মেট্রোরেজিয়ার লক্ষণঃ

  • রজস্রাব একবার স্রোতের বেগের ন্যায় দমকা বের হয় আবার কখনো কখনো অনবরত স্রাব হতে থাকে।
  • চেহারা ও মুখমন্ডল ফ্যাকাশে এবং শরীর ঠান্ডা হিমের ন্যায় হয়ে আসে।
  • তলপেটে প্রসব বেদনার ন্যায় ব্যথা অনুভূত হয়, বমি হয় বা বমি ভাব দেখা দেয়, মূর্ছা যায়, শ্বাস কষ্ট ও অস্খিরতা বৃদ্ধি পায়।
  • প্রকটভাবে রক্তহীনতার দেখা দেয়, কানে ভো ভো শব্দ হওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, নাড়ী ক্ষীন হওয়া।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমানে ঋতুস্রাব মাসিকের সময় হয়। কোন কোন সময় ঋতু বেশি দিন বন্ধ থাকে তারপর পুনরায় হঠাৎ ঋতু শুরু হয় এবং অধিক পরিমানে হয়।
  • কখনো স্রাবের সাথে কালচে পদার্থ বের হয়ে আসে। গা মেজ মেজ করা এবং আলস্য লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  • পিঠে, পেটে ও কোমরে অত্যধিক বেদনা হয়। অম্ল, অজীর্ণ, উদরাময়, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ ক্ষুধাহীনতার ভাব ও অরুচি দেখা দেয়, এ ছাড়া পরিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  • সবসময়ই গা শীত শীত করে, হাত পা ঠান্ডা বোধ হয়, মারাত্মক ভাবে দুর্বলতার সৃষ্টি হওয়া, চোখে কম দেখা, কানে কম শোনা ইত্যাদি লক্ষণও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়।

 

অতিরজের প্রকাশিত কিছু জটিল উপসর্গ লক্ষণঃ

অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ায় কখনো কখনো রোগী এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে তা থেকে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। ব্রেনের এনিমিয়া, মুর্চ্ছা প্রভৃতি হতে পারে। কখনো কখনো শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেতে পারে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia) রোগে ভুগলে রক্তহীনতার কারণে রোগিনীর জীবন সংশয়ের আশংকা হতে পারে। তাই কোনো প্রকার অবহেলা না করে শুরুতেই ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের কাছে যথাযথ চিকিৎসা নিলে, খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবেন । হোমিওপ্যাথিতে নারীদের অতিরজ মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia) নির্মূলের সর্বাধিক কার্যকরী চিকিৎসা বিদ্যমান। নতুন পুরাতন যে কোন জটিল মেট্রোরেজিয়াতে যথাযথ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিলে কষ্টকর সকল উপসর্গ নির্মূল হয়ে রোগিনী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকেন ।

 

অতিরজের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ

ক্যালকেরিয়া কাব (Calcaria Carb): চিকিৎসা করে আরোগ্য করতে না পারায় ও ঋতুদোষ আছে এমন রোগীর জন্য এই ঔষধ প্রয়োজন।
চায়না (China): আকস্মিক রক্তস্রাবের পর হঠাৎ শারীরিক দূবলতায় এই ঔষধ প্রয়োজন।
ল্যাকেসিস (Lachesis): ঋতু ক্ষণস্থায়ী, রক্তস্রাব শুরু হলে বেদনা সম্পূণ উপশমিত হয়।ঋতুস্রাবে শুরুতে ও শেষে এই ঔষধ ভাল কাজ করে।
মিউরেক্স (Murex): সামান্য নড়াচড়ায় বেদনা বৃদ্ধি পায়, মনে হয় জনন ইন্দ্রিয়ের আভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলো বের হয়ে পড়বে, এই আশংকায় উরুর উপর উরু দিয়ে চেপে বসে।অতি সামান্য স্পর্শে জনন ইন্দ্রিয়ে ব্যথা অনুভব।
সিকলিকর (Secale cor): মলিন বর্ণের রক্তস্রাবে এই ঔষধ ব্যবহৃত হয়, সামান্য নড়াচড়ায় প্রবাহের আতিশয্য জন্মে।

Related posts

Leave a Comment

%d bloggers like this: