পিত্ত পাথুরী (Gall Stone) কারণ, লক্ষন ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

সংজ্ঞা (Gall Stone):- কোন কারণবশত পিত্তকোষে বা পিত্তবাহী নালীতে পিত্তরস জমাট বেধে প্রস্তর কণা আকার ধারণ করে তাকে পিত্ত পাথুরী (Gall Stone) বলে।

পিত্ত পাথুরী (Gall Stone) কারণ (Aetiology): আহারাদির দোষে বা পিত্ত কোষের বা নিত্তনালীর প্রদাহ জনিত কারণে এই পিত্ত প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে। ইহার ফলে পিত্তরস জমাট বেধে যায় এবং ধীরে ধীতে পিত্ত পাথুরী দেখা দেয়। পিত্ত পাথুরী খুব ছোট হলে বা বালুকণার মত থাকলে অনেক সময় আপনা থেকেই বেরিয়ে যায়। এই পাখুরী যতক্ষণ পিত্ত কোষে থাকে ততক্ষণ বেশী বেদনা অনুভব হয় না কিন্তু পিত্ত কোষ থেকে পিত্তনালীতে এসে পড়ে তখনই প্রচন্ড বেদনা হয় এবং রোগী বেদনায় অস্থির হয়ে পড়ে।

 

লক্ষণানুসারে পিত্ত পাথুরী (Gall Stone) এর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ:

কার্ডুয়াস মেরী  Q : বেদনা ও স্পর্শকাতরতার সঙ্গে পিত্তকোষ প্রদাহ। • পিত্তজনিত বেদনা, যকৃত বেদনায় ভাল কাজ করে। যকৃতের বৃদ্ধি সহ পিত্তশিলা রোগ।যকৃত এবং যকৃত শিরামণ্ডল ইহার প্রধান ক্রিয়া কেন্দ্র। ৫/১০ ফোঁটা করে প্রত্যহ তিন বার।

সিওনানথাস Q : যকৃত বেদনা ও পিত্তশিলায় ফলদায়ক। নাভিদেশে বেদনা, কামড়ানি, চিনচিন ব্যথা। কোষ্ঠকাঠিন্য, কাদার মত মল, জিহ্বা হরিদ্রাবর্ণ। কামলা রোগ, তলপেট যেন ঘড়ি দিয়ে কষে ধরছে আবার ঢিলা করছে। ৫/৬ ফোঁটা করে প্রত্যহ তিন বার।

কোলেস্টেরিনাম 1x, 3x বিচূর্ণ : যকৃতের ক্যানসার, যকৃতের রক্তাধিক্য। যকৃতে প্রচণ্ড বেদনা, হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে। ডাঃ সোয়ান, ডাঃ বার্গেট 3x, 1x ব্যবহার করে উপকার করেন। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়, বেদনায় অস্থির। ২ গ্রেণ মাত্রায় দিনে তিন বার।

চেলিডোনিয়াম Q : যকৃতের ঔষধ। যকৃতের বিভিন্ন রোগে ব্যবহার। যকৃত ও পিত্ত কোষের ক্রিয়ার অভাব। পিওশিলা। কোষ্ঠকাঠিশ্য, মল শক্ত, ভেড়ার নাদের মত। মল আঠাযুক্ত, মাটির বর্ণ। ৪/৫ ফোঁটা করে দিনে চার বার।

বার্বারিস ভালগা Q : পিত্তশিলা। ইলিয়াম অঞ্চলে খোঁচা মারার ব্যথা। পিত্ত কোষের নিকটবর্তী অঞ্চলে খোঁচামারার ব্যথা। চাপ দিলে, পেট ফুললে বেদনার বৃদ্ধি। ২/৩ ফোঁটা মাত্রায় দিনে চার বার। কোষ্ঠকাঠিণ্য, বেদনার স্থান, লক্ষণ এবং প্রভৃতি পরিবর্তনশীল। পুনপুন মলবেগ। পর্যায়ক্রমে পিপাসা ও ক্ষুধা।

লরোসিসোস Q : পাকস্থলীতে প্রচণ্ড বেদনা, কথা বলতে কষ্ট হয়। মুখের পেশী ও অয়নালীর খিঁচুনি। যকৃত প্রদাহ, স্পীলন প্রদাহ। পানীয় দ্রব্য গড় গড় করে গলনালী দিয়ে পাকস্থলীতে নামে। হৃদরোগগ্রস্ত রোগীর এই রোগে উপকার। ২/৩ ফোঁটা মাত্রায় দিনে ৩ বার।

চায়না Q/6 : অবসাদকর স্রাব, জীবনীশক্তিবর্ধক যে কোন রসের ক্ষয়, উদরে পিত্তশিলা জনিত শূল বেদনা। অত্যধিক শূল বেদনাসহ পেট ফাঁপ। প্লীহা ও যকৃত বর্ধিত, কামলা রোগ। মল নরম, অতিকষ্টে নির্গত। স্নায়বিক উত্তেজনা। ২/৪ ফোঁটা মাত্রায় দিনে ৪ বার।

ক্যালকেরিয়া কার্ব 1x, 3x বিচূর্ণ : পিত্ত শিলার উৎকৃষ্ট ঔষধ। শূল বেদনার আসু নিবারণ, পিত্তশূল।  রোগী মোটা, ফর্সা, থলথলে ঘর্ম প্রধাণ। গা ভিজা থাকে এবং টক গন্ধ ছাড়ে। ১/২ গ্রেন মাত্রায়। দিনে ৪ বার।

ডিজিটেলিস Q : যকৃত স্ফীত ও কঠিন, সামান্য পরিশ্রমেই দূর্বল। জণ্ডিস, চলাফেরা করলে মাথা ঘোরে। শীতল পানি খেলে কপালে ভীষন ব্যথা। মল সাদা খড়ি মাটির মত, আঠা আঠা। ২/৩ ফোঁটা মাত্রায় দিনে তিন বার।

ডায়াস্কোরিয়া Q : শূল বেদনা, উদরের উর্ধাংশে বেদনা । প্রাতকালে মুখ শুষ্ক, তিক্ত। বেদনা স্থান পরিবর্তন করে। জিহ্বায় ময়লা প্রলেপ। প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস উদগার। ৩/৪ ফোঁটা মাত্র দিনে ৩ বার।

 

পিত্ত পাথুরী (Gall Stone) এর বায়োকেরিক ঔষধ

ক্যালকেরিয়া ফস : ইহার প্রয়োগে নতুন করে পিত্তশিলা আর সৃষ্টি হবে না। নাভির চারিদিকে ভয়ও বেদনা। গরম মল, প্রচুর ও জলের মত, ভয়ানক দুর্গন্ধ যুক্ত বায়ু সশব্দে নির্গত হয়। ৩/৪ টা বড়ি মাত্রায় দিনে ৩ বার

নেট্রাম সালফ 3x : পিত্তপাথুরীর জন্য পেটে আদৌ কোন চাপ সহ্য হয় না। এমন কি কোমরে শক্ত করে কাপড় বাঁধতে পারে না। মুখ মলিন ও শুষ্ক। উত্তাপে বেদনার উপশম। সহজে চমকে ওঠে। ২/৩ টা বড়ি মাত্রায় দিনে ৩ বার গরম পানিতে।

 

পিত্তপাথুরী ও মূত্র পাখুরীর মধ্যে লক্ষণগত পার্থক্য নির্ণয়

পিত্ত পাথুরী (Biliary Colic)

(১) বমি ও বমিভাব বর্তমান। (২) নাভি অঞ্চলে প্রচণ্ড বেদনা। (৩) জণ্ডিস রোগ বর্তমান। (৪) বেদনা প্রায়ই কুক্ষিদেশ থেকে আরস্ত হয়ে কাঁধ ও পিঠ পর্যন্ত। (৫) বারবার মুত্র ত্যাগের ইচ্ছা থাকে না। (৬) পাঘর অনেক সময় মলের সঙ্গে নির্গত হয়। (৭) মুখে তিক্ত স্বাদ থাকে।

 

মূত্র পাথুরী (Renal Colic)

(১) নাও থাকতে পারে। (২) পিঠের নীচের দিকে অণ্ডকোষ পর্যন্ত বেদনা। (৩) নাও থাকতে পারে। (৪) মুত্রনালী হতে অণ্ডকোষ পর্যন্ত। (৫) ইচ্ছা থাকে, মূত্রে রক্ত বের হয়। (৬) পাথর অনেক সময় মূত্রে নির্গত হয়। (৭) মুখে তিক্ত স্বাদ থাকে না।

 

রোগ নির্ণয় (Diagnosis) – X-Ray করা প্রয়োজন।

 

পথ্য:-  লঘু উষ্ণ খাদ্য। পাউরুটি সেঁকে জলে ধুয়ে সামান্য চিনি দিয়ে খাওয়া যায়। আপেল সিদ্ধ উপকারী। চিকিৎসাকালীণ সময় সর্বদাই হাল্কা পুষ্টিকর খাদ্য ও তরল জাতীয় খাদ্য। হরলিক্স, ডাবের পানি, ঘোল, ছানার পানি উপকারী। রোগী যখন আরোগ্য লাভ করবে অর্থাৎ পাথরী বের হয়ে যাবে তখন ঝোলভাত, মশলা অতি সামান্য। ঘি, মাখন, চর্বি জাতীয় খাদ্য নিষেধ। উগ্র বা কোন নেশা করা নিষেধ। মাংস, গুরুপাক খাদ্য বর্জনীয়। প্রচণ্ড বেদনার সময় গরম সেক বা গরম পুলটিস লাগান বা গরম পানি পান করতে দেয়া। তার্পিন তেলের মালিশ উপকারী।

Related posts

Leave a Comment