Appendicitis এপেনডিসাইটিসপরিপাকতন্ত্র 

এপেনডিসাইটিস (Appendicitis): কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

উদরের নাভির ডান দিকে এপেনডিকস নামক অঙ্গটি অবস্খিত। এপেনডিসাইটিস হচ্ছে এপেনডিকস নামক ক্ষুদ্র এই অঙ্গটির প্রদাহ। এটি দেখতে অনেকটা কৃমির মতো এবং এটি খাদ্যনালীর বৃহদন্ত্রের অংশ। রোগপ্রতিরোধে এর ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হলেও এই অঙ্গহানির ফলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। এপেনডিসাইটিস এ হঠাৎ করেই  প্রচণ্ড পেটব্যথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে ব্যথা বেড়ে প্রথমে নাভির চারপাশ থেকে পরে তলপেটের একটু ডান দিকে গিয়ে স্থির হয়।

এপেনডিসাইটিস কী (Appendicitis) ?

আমাদের বৃহদন্ত্র ফাঁপা নলের মতো । বৃহদন্ত্রের তিনটি অংশ। এর মধ্যে প্রথম অংশ হচ্ছে সিকাম (Caecum)। এই সিকামের সাথে আঙ্গুলের মত দেখতে ছোট একটি প্রবৃদ্ধি হল ভার্মিফরম এপেনডিক্স (Vermiform Appendix) বা উপাংগনালী। এই উপাংগনালীটির একদিক উম্মুক্ত থাকে অপরদিকে বন্ধ থাকে। কোন কারণবশত: যদি এর মধ্যে মল বা কৃমি, পাঁচিত খাদ্য ঢুকে যায় তবে রক্ত ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। নানান জীবাণুর আক্রমণে এপেনডিক্সের ঐ অংশে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। একেই Appendicitis বা উপাংগপ্রদাহ বলে।

এপেনডিসাইটিস এর প্রকারভেদঃ

অবস্থাগত দিক থেকে এপেনডিসাইটিসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. প্রদাহ অবস্থা (Catarrhal Stage): কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত মাছ-মাংস আহার, এপেনডিক্সের মধ্যে মল, মাছের কাটা, ছোট হাড়ের টুকরা ইত্যাদি প্রবেশ করে এই জাতীয় প্রদাহের সৃষ্টি করে।

২. ক্ষতযুক্ত অবস্থা (Ulcerative Stage): এই অবস্থায় উপাঙ্গের (Appendix) ভিতর ক্ষত সৃষ্টি হয় বা ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। এতে ভয়ানক জ্বালা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়।

৩. পচনশীল অবস্থা (Gangrenous Stage): এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা। এতে উপাঙ্গের (Appendix) অগ্রভাগ সামগ্রিকভাবে উপাঙ্গটি বিনষ্ট হয়। এতে উপাঙ্ঙ্গের Caecum এবং ক্ষুদ্রান্তের কিছু অংশ একসঙ্গে জড়িত হয়ে অন্ত্রনালীর আংশিক বা সামগ্রিক অবরুদ্ধভাবের সৃষ্টি করে।

 

এপেনডিসাইটিস এর কারণ (Aetiology of Appendicitis)

বিভিন্ন কারণে এপেনডিসাইটিস হতে পারে, যেমন-­

১. ফিকুলিথ (শক্ত মলের নুড়ি) দ্বারা এপেনডিকসের প্রবেশমুখ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে।

২. হজম না হওয়া খাদ্যের অংশ যেমন টমেটোর খোসা বা অন্য কিছু দ্বারা এপেনডিকসের প্রবেশমুখ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে।

৩. গুঁড়া কৃমির দ্বারা এবং ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হয়েও এপেনডিসাইটিস হতে পারে।

৪. অতিরিক্ত আহার, কোষ্ঠকাঠিন্য, তাড়াতাড়ি আহার।

 

এপেনডিসাইটিস এর লক্ষণ/উপসর্গ:

  • পেট ব্যথাঃ প্রধান লক্ষণ হল পেটে একটানা ব্যথা, যেটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। প্রথমে নাভির চারপাশ থেকে পরে তলপেটের একটু ডান দিকে গিয়ে স্থির হয়। সময়ের সাথে ব্যথার পরিমাণ বাড়ে। রোগির তলপেটে হাত দিলেই শক্ত ও ব্যথা অনুভূত হয়।
  • বমিঃ বার বার বমি ভাব (Nausea) হয়, বা দু-একবার বমি হতে পারে।
  • জ্বরঃ কাশি, কোষ্ঠকাঠিণ্য বা রোগির দেহে অল্প জ্বর আসতে পারে।
  • ক্ষুধা: রোগীর ক্ষুধা কমে যেতে পারে
  • মল: কনস্টিপেনশন এবং কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও হতে পারে।
  • যদি কখনও এপেনডিক্স ফেটে যায় তাহলে হঠাৎ ব্যথা কমে গিয়ে ভাল লাগতে থাকবে, কিন্তু তখন ফ্লুইড পেটের ভেতরে অন্যান্য ফাঁকা স্থানে (abdominal cavity) ছড়িয়ে পড়ে অবস্থা আগের থেকে খারাপ হয়ে যাবে।

 

এপেনডিসাইটিস-এর জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাঃ

  • প্রথমে রোগীকে কাশতে বলে দেখতে হবে পেটে তীব্র ব্যথা হয় কিনা।
  • অথবা ধীরে ধীরে কুঁচকির একটু ওপরে হাতের তালু দিয়ে জোরে চাপ দিন, যতক্ষণ না একটু ব্যথা লাগে। তারপর চট করে হাতটা সরিয়ে নিন।
  • এছাড়া তলপেটের বাম দিকে সমানভাবে চাপ দিলে পেটের মধ্যে নাড়িভুঁড়ি বাঁদিক থেকে সরে ডান দিকে যায়। যদি এর ফলে ডানদিকের তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে সম্ভবতঃ এপেনডিসাইটিস হয়েছে বলে বুঝতে হবে।
  • রোগীর ইতিহাস ও লক্ষণগুলো থেকেই সাধারণতঃ ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ নিরূপণ করা হয়। এর সাথে প্রস্রাব,রক্ত, এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম (মেয়েদের ক্ষেত্রে) করে পেট ব্যথার অন্য কারণগুলো বাদ দিয়ে এপেনডিসাইটিস রোগ ডায়াগনোসিস নিশ্চিত করা হয়।

 

এপেনডিসাইটিস-এর জটিলতা:

  • পঁচন ধরা বা Gangrene
  • অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যেতে পারে
  • পেরিটোনাইটিস (পেরিটোনিয়ামের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত ইনফেকশন)
  • শক হতে পারে
  • এপেনডিকুলার লাম্প হতে পারে
  • মৃত্যুও হতে পারে

 

এপেনডিসাইটিস এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

  • ল্যাকেসিস (): পেট ফোলা, ডান দিকে কেটে ফেলার মত ব্যাথা। পা গুটিয়ে রাখে, চীৎ হয়ে শুয়ে থাকে। জ্বর, বমি ও কোষ্ঠকাঠিন্য। অনবরত পানি পানের ইচ্ছা, কিন্তু সামান্য পান করে, জিহ্বা লাল। ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না।
  • এপিস মেল (): শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুল উঠে, শোথ ভাব। হুল ফোটানো ব্যাথা। জ্বালাপোড়া করে, মাথা ঘোরা সহ হাঁচি। খাদ্যদ্রব্য বমি, পিপাসাহীনতা, ডান কুচকি ফোলা।
  • আর্নিকা মন্ট (): আঘাত লেগে রোগের সৃষ্টি। জ্বর, শরীর ব্যথা, বমি, মাথা গরম-শরীর ঠান্ডা। রক্তদুষ্টি, চেহারা লাল উজ্জল, পুঁজ সংক্রামন। মুল দূর্গন্ধযুক্ত, কালো বর্ণ।
  • হিপার সালফ (): পুঁজ হওয়ার উপক্রম। পেটে প্রচন্ড ব্যথা, পেট স্ফীত। পা গুটিয়ে রাখে, বার বার মল ত্যাগের ইচ্ছা। মনে হয় শরীরের কোন অংশের উপর দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে। পায়খানা কাদার মত নরম, অম্লগন্ধ যুক্ত।
  • ব্রায়োনিয়া (): অতিশয় টাটানি, খোঁচামারা, ছিঁড়ে ফেলার মত ব্যথা। ব্যথা সঞ্চালনে বৃদ্ধি এবং বিশ্রামে উপশম। মাথা ঘোরে, বমি বমি ভাব।

Leave a Comment

%d bloggers like this: