ভালভের রোগ (Valvular diseases) কারণ, লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

সংজ্ঞা (Definition):  হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনের জন্য ভালভের ভূমিকা প্রধান। সমস্ত ভালভের নিয়ম হচ্ছে রক্ত ভিতরে প্রবেশ করানোর সময় মুখ বেশ খোলা থাকে এবং রক্ত প্রবেশের পর আবার তখনই বন্ধ হয়ে যায়। উক্ত ভালভগুলোর কোন বিকৃতি ঘটলে যে সকল ব্যাধি হয় তাকেই ভালভের রোগ (Valvular diseases)  বলে। যখন মানবদেহের এক বা একাধিক হার্টের ভালভ সঠিকভাবে খুলতে বা বন্ধ করতে অসমর্থ হয়, তখন তাকে হার্টের ভালভের রোগ বলা হয়। হৃদপিন্ড ৪টি প্রকোষ্ঠের সমন্বয়ে গঠিত। এর উপরের চেম্বারগুলোকে বাম অলিন্দ ও ডান অলিন্দ এবং যখন নীচের চেম্বারগুলিকে বাম ভেন্ট্রিকল ও ডান ভেন্ট্রিকল বলে।

হৃৎপিণ্ডের প্রতিটি চেম্বারের প্রস্থানের ৪টি ভালভ হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে ফুসফুস সহ শরীরের বাকি অংশে রক্ত ​​​​প্রবাহিত করে। ভালভুলার হার্ট ডিজিজ দেখা দেয় তখন যখন হৃদপিন্ডের কোন ভালভ ক্ষতিগ্রস্ত/অসুস্থ হয় এবং তারা যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে কাজ করে না।

 

ভালভের রোগ এর কারণ (Causes of Valvular diseases):

হৃদপিণ্ডের একটি কামরা হতে অন্য কামরায় রক্ত যাবার সময় যে কপাট দিয়ে উহা যায়, যদি কোন কারণবশত সেই কপাটের মুখ সরু হয়ে যায় তবে সেই কামরার সমস্ত রক্ত বের না হয়ে রক্তের কিছুটা অংশ কামরার ভিতরেই থেকে যায়। ইহাতে হার্টের ডাইলেটেশান হয়। আবার যদি কোন কারণবশত কপাট সম্পূর্ণ বন্ধ না হয় তবে পুনরায় সেই কামরায় রক্ত ফিরে আসে, ইহাতেও কামরার মধ্যে অধিক রক্ত থেকে যায় ফলে হার্টের মধ্যে অধিক পরিমান রক্ত জমে থাকলে দিন দিন হার্ট ক্রমশ বড় হতে থাকে, উহাকে ডাইলেটেশান অফ হার্ট বলে। সুতরাং দেখা যায় ভালভ (কপাট) সরু হোক আর রক্তের একটা স্রোত বইতে থাকে তখনই রোগ সৃষ্টির সুযোগ হয়। এছাড়া অন্যান্য কারণেও ভালভের পীড়া হতে পারে যেমন অতিরিক্ত মদ্যপান, উগ্রজাতীয় নেশা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনবরত হাতুড়ি, মুগুর, বা করাত চালানো। অতিরিক্ত চা. কফিপান, ইন্দ্রিয় চালনা, উপদংশ, বাত, এলবুমিনুরিয়া ইত্যাদি কারনেও হতে পারে।

 

ভালভের রোগ এর প্রকার ভেদ (Classification of Valvular diseases):

(1) মাইট্রাল ভালভের পীড়া।

(2) ট্রাইকাসপিড ভালভের পীড়া।

(3) এয়োটিক ভালভের পীড়া।

 

ভালভের রোগ এর লক্ষন :

  • বুক ধরফর কর
  • বুকে ব্যথা হওয়া
  • অবসাদ গ্রস্থ
  • মাথা ঘোরা ভাব
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • অনিয়মিতভাবে হৃদস্পন্দন
  • পা ফুলে যাওয়া

 

রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা (Diagnosis and Examination) :

(1) Haemogram/Sugar(F)/Urea/Cholesterol/LDH/SGOT/CPK/CK-MB/Sodium/Potassium

 

ভালভের রোগ এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (Homeopathic treatment for Valvular diseases):

এডেনিস ভার্নেলিস Q : হৃদরোগের অতি উৎকৃষ্ট ঔষধ।বাতরোগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অন্ডলালমু্ত্রের পর যখন হৃদপেশী সমুহের মেদাপকর্ষ। হৃদপিন্ডের শোথ রোগ। হৃদযন্ত্রের সংকোচন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মু্ত্রক্রিয়াও বৃদ্ধি করে। হৃদপিন্ডের দুর্বলতা, ধীর নারী সহ জীবনীশক্তির অভাব, বক্ষদেশে পানিসঞ্চয়, উদরী, সর্বাঙ্গীন শোথ। বার বার দীর্ঘশ্বাস গ্রহন।

কনভেলেরিয়া মেজালিস Q : হৃদক্রিয়ার শক্তি বৃদ্ধি করে, হাদক্রিয়া নিয়মিত করে। বামদিকের হাল প্রকোষ্ঠ যখন প্রসারিত এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। শিরার রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত মনে হয়। সারা বুক জুড়ে স্পক্ষন। হৃদ অভ্যন্তরের আবরক প্রদাহ মনে হয় হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল পরক্ষণেই আবার চলতে শুরু করে।

ডিজিটেলিস Q : নাড়ী দুর্বল, অসম, সবিয়াম, অত্যন্ত ধীর গতি। আয়াত্মরীন এবং বাহ্যিক শেখে লক্ষণ। হলবেস্টের দুর্বলতা এবং বিবৃদ্ধি ইহার প্রধান লক্ষণ । হৃদ পেশীর অক্ষমতা বিশেষ করে হৃদ ধমনীতে তত্ত্বময় পদার্থ সঞ্চয়। হাদয়ন্ত্রের যান্ত্রিক গোলযোগ।

লরোসিরেসাস : মাইট্রাল ভালভের রক্ত উদগীরণ। বুক ধড়ফড়। হলপ্রদেশ যেন চেপে ধরে। শিশুর নীল রোগ। গভীর নিদ্রা, ঘুমের ঘোরে নাক ডাকে এবং কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া। হাত পায়ের নখগুলো শক্ত এবং গাঁট গাট। আঙ্গুলের ডগা মুঙ্গরের মত।

 

অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ (Other important remedies) :

কক্কাস ক্যাকটি ৩/৬, গ্লিন্ডেলিয়া Q, লিলিয়ামটিগ 200, স্ট্রোফেনখাস হসপিডাস 3০, ট্যাবেকাম ৬ ও স্পাইজেলিয়া ৬/৩০. লাইকোপোডিয়াম 200, গ্লোনোইন ৬,৩০, আর্সেনিক এ্যাল্বাম 200.

 

বায়োকেমিক ঔষধ:  

ফেরাম ফস 6x, 12x : রক্তবহানাড়ী ও শিরার উপর ভাল কাজ করে। ধমনী ও শিরার প্রদাহ। নাড়ী পূর্ণ, গোল এবং দড়ির মত। হৃদপিণ্ডের বেদনা কখনো বাম দিকে, কখনো ডানদিকে এবং মেরুদণ্ড পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। ২/৩ বড়ি মাত্রায় ঈষৎ উষ্ণ জলে দিনে ৩/৪ বার সেব্য।

নেট্রাম মিউর 6x, 12x : হৃদযন্ত্রের অগ্রভাগে বেদনা। চলাফেরা করলে বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললে ব্যথা আরো বৃদ্ধি। নাড়ী খুব দ্রুত এবং অনিয়মিত। বাম দিকে শুলে বেদনা বৃদ্ধি। বুক ধড়ফড় করে। হৃদস্পন্দনের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেহ কাঁপতে থাকে। দেহ যেন আরষ্ট হয়ে আসে। শীত শীত বোধ। ২/৩টা বড়ি গরম জলে দিনে ৪/৫ বার।

 

পথ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা (Diet and Management):

এই জাতীয় রোগের জন্য অনেক সময় Surgical operation এর দরকার হয়। তবে এই জাতীয় Operation এত ব্যয়বহুল যে সাধারণ লোকের ক্ষমতার বাইরে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বটে কিন্তু এই সব চিকিৎসা সাধারণ লোকদের জন্য নয়। এমন কি এই সব রোগ সঠিক ভাবে Diagnosis করতে যে খরচ হয় তাও অনেকের সাধ্যের বাইরে। অতএব সতর্কভাবে চললে অনেক সময় হার্টের রোগ এড়ানো যায়। আজকাল এই সব রোগের জন্য Pace maker বসান ব্যবস্থা আছে। তবে তা আমাদের মত সাধারণ লোকের জন্য নয়। সময়মত আহার, বিশ্রাম, ঘুম, পরিমিত বিশ্রাম ও পরিশ্রম। দোক্তা, পান, তামাক, মদ গ্রহণ নিষেধ। উন্মুক্ত বায়ুতে ভ্রমণ এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ।

Related posts

Leave a Comment